কাফালা প্রথা বা স্পন্সরশীপ বাতিল হলে কী কী সুবিধা পাচ্ছেন প্রবাসীরা ? এমন প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে এখন সকল সৌদি প্রবাসীদের মনে। প্রায় ৭ দশক থেকে চলে আসা কাফালা প্রথা আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ হওয়ার ঘোষণা আসে এই বছরের একদম শুরুতেই। তবে কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে এটির বাস্তবায়ন পিছিয়ে যায়।
কাফালা প্রথা বা স্পন্সরশীপ বাতিল হলে কী কী সুবিধা পাচ্ছেন প্রবাসীরা ?
কাফালা বাতিল হলে সৌদি প্রবাসী কর্মী বা ব্যাবসায়ী উভয়ের জন্যই এটি বেশ উপকারী হবে। কেননা এটি অনেকটা খাঁচায় বন্দী পাখির মুক্তি পাওয়ার মতই।
যেভাবে প্রবাসী কর্মী ও ব্যাবসায়রী লাভবান হতে পারেন :
চাকরি বা ব্যাবসায় কফিলের দরকার হবে না :
কাফালা বাতিল হলে সৌদি আরবে প্রবাসীদের চাকরি বা ব্যাবসার ক্ষেত্রে আর কোন স্থানীয় সৌদি নাগরিকদের( কফিল) প্রতি নির্ভরশীল হতে হবে না।
স্বাধীন ভাবে প্রবাসীরা সৌদি আরবে চাকরি বা ব্যাবসা করতে পারবেন।
সম্পূর্ণ ঝুঁকিহীন চাকরি বা ব্যাবসার সুযোগ :
আসলে সত্যি কথা বলতে সকলেরই জানা আছে যে সৌদি আরবে একজন প্রবাসী হিসাবে একজন কফিলের অধীনে কাজ বা ব্যাবসা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ একটি কাজ।
কফিলের অধীনে চাকরি করলে তাঁর অনুমোদন ব্যাতিত অন্য কোন জায়গায় চাকরি নেওয়া যায় না।
আর ব্যাবসায়ীদের জন্য সবচে ঝুঁকির কথা এই যে ঐ ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণটাই কফিলের নামে থাকে। কাগজে কলমে অর্থাৎ আইনত কোন ভাবেই ঐ ব্যাবসার মালিকানা সৌদি প্রবাসী ব্যাবসায়ীর থাকে না।
এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে সৌদি নাগরিক কফিলরা নানা রকম অসৎপন্থা ও ফায়দা লুটে থাকে।
কাফালা প্রথা বিলুপ্তির মাধ্যমে এই দিক দিয়ে প্রবাসী ব্যাবসায়ীরা মুক্তি পেতে চলেছেন।
নিজের ইচ্ছামত যখন খুশী চাকরি পরিবর্তনের সুযোগ :
কাফালাপ্রথা বিলুপ্তির সাথে সাথে একজন প্রবাসী শ্রমিক বা চাকুরে আর কোন সৌদি নাগরিক( কাফালার) অধীনে থাকছে না। ফলে চাকরি পরিবর্তন করতে তাঁর আর কফিলের অনুমোদন দরকার হবে না।
ইকামা নবায়ন, স্বাধীনভাবে এক্সিট ও রিএন্ট্রি ভিসার সুযোগ :
কাফালাপ্রথা বিলুপ্ত হলে অর্থাৎ কফিল আর না থাকলে সকল প্রবাসী স্বাধীনভাবে নিজেদের ইকামা নবায়ন, এক্সিট ও রিএন্ট্রি ভিসা সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কারো কোন প্রকার হস্তক্ষেপ ছাড়া নিজেরাই সম্পন্ন করতে পারবেন।
এমনকি ফাইনাল পাসপোর্ট স্ট্যাম্পিংও করতে কফিলের কোন প্রকার অনুমোদন লাগবে না এই ক্ষেত্রে।
এর ফলে ইকামা নবায়ন করতে গিয়ে কফিল কর্তৃক কোন প্রকার বিড়ম্বনার শিকার হওয়ার সুযোগ নাই।
প্রিমিয়াম ইকামা পাওয়ার সুযোগ :
গতবছর ২০১৯ সালের ১৪ মে সৌদি সংসদে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল “প্রিমিয়াম ইকামা” নামের বিশেষ ইকামা প্রয়োগ প্রবর্তনের। এই ইকামাতে জাতীয়তার নির্বিশেষে, সৌদি আরবের সাথে সম্পর্কযুক্ত সকল প্রবাসীদের একটি স্থায়ী বা অস্থায়ী আবাস প্রাপ্তির সুযোগ করে দিবে যা তাদেরকে অনেক সুযোগ সুবিধা প্রদান করবে।
এর ফলে সৌদি প্রবাসীগণ তাদের নিজেদের এবং সেই সাথে তাদের নিজ নিজ পরিবারের জন্য বেশ কয়েকটি পরিষেবা গ্রহণের সুযোগ পেতে যাচ্ছে।
এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে এই যে প্রায় ৭ দশক ধরে চলে আসা কাফালা প্রথা বিলুপ্তির একদম শেষ ধাপে আসার সাথে সাথে প্রিমিয়াম ইকামা গ্রহণের সুযোগও এসে গেল।
তবে প্রিমিয়াম ইকামা অনেক ব্যায়বহুল। তাই সাধারণ সৌদি প্রবাসী বা ব্যাবসায়ীদের জন্য এটি গ্রহণ করা এবং এর সুযোগ সুবিধাসমূহ ভোগ করা কিছুটা কঠিনই হবে।
সর্বশেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২০, ২১:৫৯
পাঠকের মন্তব্য