গত নয় মাসে সিঙ্গাপুরে থাকা প্রায় অর্ধেক প্রবাসী শ্রমিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানানো হয়। সিঙ্গাপুর নিজ নাগরিকদের সুরক্ষা ও স্বাচ্ছন্দে উদ্যোগী হলেও, প্রবাসী দরিদ্র কর্মীদের জন্য তেমন ব্যবস্থা নেয়নি।
২০১৩ সালে সিঙ্গাপুরে প্রায় এক লাখ ৬০ হাজার অভিবাসী বাংলাদেশি কর্মী ছিলেন বলে দেশটিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রমকল্যাণ শাখার বরাতে জানা গেছে। ২০১৯ সাল নাগাদ এই সংখ্যা দুই লাখ ছাড়িয়েছে বলে বেসরকারি সূত্রগুলো ইঙ্গিত দেয়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ছোট এই দ্বীপরাষ্ট্রটি তাই দীর্ঘদিন ধরেই দেশের শ্রমশক্তি রপ্তানির অন্যতম বড় বাজার।
প্রবাসী এই কর্মীদের অধিকাংশেই কোভিড-১৯ অতিমারীর কারণে দেশে ফিরে এসেছেন। কিন্তু, সেখানে যারা রয়ে গেছেন তাদের অর্থনৈতিক সঙ্কটের সঙ্গেসঙ্গে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিও মোকাবিলা করতে হচ্ছে। অবশ্য, তা শুধু বাংলাদেশ নয়, বরং তুলামূলক দরিদ্র দেশ থেকে জীবিকার সন্ধানে যাওয়া সব প্রবাসী কর্মীই এমন দশায় পড়েছেন।
সাম্প্রতিক সময় এমন ইঙ্গিত মিলেছে অধিকার গোষ্ঠী ট্র্যাঞ্জিয়েন্ট ওয়ার্কার্স কাউন্ট টু (টিডব্লিউসি2) প্রকাশিত প্রতিবেদনে। সেখানে গত নয় মাসে দেশটিতে থাকা প্রায় অর্ধেক প্রবাসী শ্রমিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানানো হয়। তবে এই ফলাফলে বিস্ময় প্রকাশ না করে গোষ্ঠীটি বলেছে, কর্তৃপক্ষের অবহেলা এবং বৈষম্যের কারণে এমন অবস্থা এবং তা অপ্রত্যাশিতও নয়।
নতুন তথ্যে মোট এক লাখ ৫২ হাজার বিদেশি কর্মীর সংক্রমিত হওয়ার কথা জানানো হয়, যা বর্তমানে দেশটিতে থাকা মোট প্রবাসী কর্মী সংখ্যার ৪৭ শতাংশ।
শ্রমিকদের থাকার আবাসিক স্থাপনায় একে-অপরের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা প্রায় অসম্ভব। ছবি: বিবিসি
সেই তুলনায় অতিমারী হানা দেওয়ার পর থেকে লন্ডনের মতো বড় মহানগরীতে মোট জনসংখ্যার মাত্র ১১ শতাংশ সংক্রমিত হয়েছে।
প্রবাসী কর্মীদের বাদ দিলে সিঙ্গাপুরের ৪ হাজারেরও কম স্থায়ী বাসিন্দা কোভিড-১৯ পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে।
এপ্রিলের পরের কয়েক মাসে সিঙ্গাপুরের সাধারণ জনসংখ্যা এবং অভিবাসী কর্মীদের মধ্যে সংক্রমণ হার প্রায় শূন্যের কোথায় নেমে আসে। সেই প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ পূর্ব আরোপিত কিছু বিধি-নিষেধ জন-সাধারণের জন্য শিথিল করে।
সিঙ্গাপুরের বেশির ভাগ বিদেশি কর্মী এসেছেন বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও পাকিস্তানের মতো দক্ষিণ এশিয়ার তুলনামূলক কম আয়ের দেশ থেকে। তারা মূলত, নির্মাণ এবং উৎপাদন খাতে যুক্ত। তাদের চলাচলে কিন্তু বিধি-নিষেধ শিথিল করেনি সিঙ্গাপুরের প্রশাসন। আগামী বছর থেকে পর্যায়ক্রমে এসব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পরিকল্পনা রয়েছে। বোঝাই যাচ্ছে, সংক্রামক জীবাণুর বিস্তারের সময়ে একসঙ্গে থাকার ফলেই তাদের মধ্যে রোগটির প্রকোপ বাড়ছে।
টিডব্লিউসি2 সংস্থার বিশেষজ্ঞ অ্যালেক্স উ বিবিসিকে বলেন, ‘অভিবাসী কর্মীদের বন্দির মতো আটকে রাখার পেছনে সিঙ্গাপুরের কোন ন্যায়সঙ্গত যুক্তি থাকতে পারে না। কেউ কেউ আট মাস ধরেই বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন।’
সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গত আগস্টে জানায়, অভিবাসী জনসংখ্যার সকলকে অন্তত একবার পরীক্ষা করা হয়েছে। দুই ধরনের কোভিড-১৯ শনাক্তের পরীক্ষা পদ্ধতির সাহায্যে এসব টেস্ট করা হয়।তার ভিত্তিতেই পজিটিভ শনাক্ত এবং আগে যারা আক্রান্ত হয়েছিলেন তাদেরকে অন্যদের থেকে আলাদা করে রাখা হয়েছে। এসব স্থাপনায় সেসময় চিকিৎসা সেবা এবং অন্যান্য সহায়তা দেওয়ার দাবিও করা হয়েছিল।
দ্বীপ রাষ্ট্রটির ডরমিটারিগুলোতে রাখা হয়েছে মোট ৩ লাখ ২৩ হাজার জনকে। এদের মধ্যে এক লাখ ৫২ হাজার সংক্রমণ খুবই উচ্চগতির রোগ বিস্তারের চিত্র তুলে ধরে। তবে এখনও ৬৫ হাজার শ্রমিকের সেরলজি টেস্ট বাকি থাকায় এই সংখ্যা আরো বাড়বে, এমন অনুমান করা হচ্ছে।
উ বলেন, ‘এই সংখ্যা আমাদের বিস্মিত করেনি। কারণ, এর আগেই চলতি বছরের মাঝামাঝি শ্রমিকেরা আমাদের জানান, তাদের আইসোলেশনে না রেখে ঘরে বন্দী থাকতে বাধ্য করা হয়েছে। ওই সময় তারা রুমমেটদের সংস্পর্শেই ছিলেন।’
সূত্র: বিবিসি
সর্বশেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২০, ০৯:১০
পাঠকের মন্তব্য