সৌদি দূতাবাসে ঢিমেতালে ভিসা স্ট্যাম্পিংয়ের কারণে কর্মীদের ভোগান্তি

কর্মীদের ভোগান্তি
কর্মীদের ভোগান্তি

বাংলাদেশের বৃহৎ শ্রমবাজার সৌদি আরবে জনশক্তি পাঠানোর চাহিদা কিছুটা বাড়লেও দূতাবাস থেকে ভিসা স্ট্যাম্পিং কার্যক্রম ঢিমেতালে হওয়ায় বিপাকে পড়ছেন অনেক ব্যবসায়ী। তাদের অভিযোগ- এজেন্সিগুলোতে নিয়োগকারী কোম্পানির কর্মী চাহিদাপত্র বেশি। কিন্তু দূতাবাস থেকে সপ্তাহে এক এজেন্সিকে সর্বোচ্চ ২৫টি করে ভিসা স্ট্যাম্পিং দেয়ার নিয়ম থাকার কারণে অনেক ব্যবসায়ী সময়মতো শ্রমিক পাঠাতে পারছে না। একইসাথে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখেও পড়ছেন। এই সংখ্যাটি যদি দ্বিগুণ করা হতো তাহলে দেশ থেকে যেমন কর্মী যাওয়ার হার বাড়ত তেমনি কোম্পানিগুলোর সাথে ঢাকার এজেন্সিগুলোর দূরত্ব কমে আসত। দূতাবাসের সাথে সম্পৃক্ত এজেন্সি মালিক ও তাদের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, সৌদি দূতাবাসে ভিসা কন্স্যুলার বিভাগে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ভিসা স্ট্যাম্পিং কার্যক্রম চলছে। শুনেছি সেখানে জনবল কম থাকায় তারা ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ভিসা স্ট্যাম্পিংয়ের কাজের গতি বাড়াতে পারছেন না।

এ প্রসঙ্গে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় জনশক্তি প্রেরণকারী ব্যবসায়ীদের সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ অব বাংলাদেশের (বায়রা) সাবেক দুইজন নেতার সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা কেউ টেলিফোন ধরেননি। আবার সৌদি আরবের ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত এমন একাধিক এজেন্সি মালিকের সাথে যোগাযোগ করে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তারা কেউ নাম প্রকাশ করে কথা বলতে রাজি হননি।

জানা গেছে, প্রতি সপ্তাহে রোব, সোম, মঙ্গল ও বুধবার দূতাবাসে ভিসা স্ট্যাম্পিং কার্যক্রম চলে। এর মধ্যে রোববার ২৫০০ বই স্ট্যাম্পিং হলেও বুধবার হয়েছে ২০০০-এর মতো। তবে সোমবার ও মঙ্গলবার এ দু’দিন গড়ে ৩ হাজার করে পাসপোর্ট বইতে ভিসা দেয়া হচ্ছে। প্রতিদিন সকাল ১০টায় পাসপোর্ট বই দূতাবাসের ভিসা সেকশনে জমা হচ্ছে। বেলা সাড়ে ৩টার মধ্যে ভিসা লাগানো পাসপোর্ট ডেলিভারি হয়ে যায়। তবে সম্প্রতি করোনার প্রভাবের কারণে কাজের গতি কমে যাওয়ায় পাসপোর্ট বই ডেলিভারি দিতে কখনো রাত ৭-৮টাও বাজছে। প্রতিদিন গড়ে ৫০০ রিক্রুটিং এজেন্সির পাসপোর্ট দূতাবাসে জমা হয়ে থাকে। এর মধ্যে একটি এজেন্সির সপ্তাহে ২৫ বইয়ের মধ্যে কিছু বই ফেরত দেয়া হচ্ছে কারণে-অকারণে।

গতকাল সৌদি আরবের ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত একাধিক মালিক নাম না প্রকাশ করে নয়া দিগন্তকে আপেক্ষ করে বলেন, সৌদি আরবের লোক পাঠানোর ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে ১৫০০ এজেন্সি। তবে এর মধ্যে বড় এজেন্সি রয়েছে ৭০-১০০টি। প্রথম দফা করোনার ঢেউ কমার পর সৌদি আরব থেকে নতুন কর্মীর চাহিদাপত্র আসতে শুরু করে। একই সাথে গত ফেব্রুয়ারি ও মার্চে দেশে এসে আটকা পড়া শ্রমিকরাও এখন যেতে ভিড় জমাচ্ছে। চাহিদার তুলনায় কর্মীর ভিসা স্ট্যাম্পিং সপ্তাহে দুইবার এক এজেন্সির নামে মাত্র ২৫টি ভিসা দেয়ায় পরিস্থিতি কিছুটা অস্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন।

সপ্তাহে ভিসা স্ট্যাম্পিংয়ের সংখ্যাটা কমপক্ষে যদি ৫০টি করা হতো তাহলে তারা ব্যবসায়িক ক্ষতি থেকে বাঁচতে পারতেন। একই সাথে অনেক ব্যবসায়ী নিয়োগকারী কোম্পানির চাহিদা পূরণে সঠিক সময়ে কর্মী পাঠাতে পারতেন। এক প্রশ্নের উত্তরে তারা বলেন, আগে ভিসা স্ট্যাম্পিং বিভাগে জনবল ছিল ২০ জনের মতো। এখন সেটি কমে হয়েছে দুই-তিনজনে, যার কারণে তাদের ওপরও চাপ বেড়ে গেছে।

গতকাল ঢাকার একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী নয়া দিগন্তকে বলেন, সৌদি আরবের সাথে আমাদের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। পৃথিবীতে যত শ্রমিক যাচ্ছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি কর্মী যাচ্ছে সৌদি আরবেই। তবে ঢাকার সৌদি দূতাবাসের কারো সাথে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই। আমরা আমাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে তাদের ভিসা সেকশনে পাসপোর্ট জমা দিয়ে আসি। সময় হলে আবার নিয়ে আসি। ‘এর বাইরে আর কোনো কথা বললে আমার ব্যবসা করা লাগবে না বলে জানান তিনি।’

সর্বশেষ আপডেট: ২ জানুয়ারী ২০২১, ১০:১২
Desk
এড্যমিন

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও