বাংলাদেশিদের দেখলেই ‘ভাইরাস’ বলছেন ইতালিয়ানরা

বাংলাদেশি, ইতালি. ইউরোপ, ভাইরাস
বাংলাদেশি, ইতালি. ইউরোপ, ভাইরাস

সম্প্রতি ইতালিতে ফেরা বাংলাদেশিদের মাধ্যমে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) ছড়ানোয় দেশটিতে বসবাসরত প্রবাসীরা বিপাকে পড়ছেন। তারা স্থানীয়দের কাছে প্রতিনিয়ত হেয়প্রতিপন্ন হচ্ছেন। এছাড়া কাজে যোগ দিতে পারছেন না অনেকে। -খবর জাগো নিউজ

চীন থেকে ছড়িয়ে পড়ার পর ইতালিতে সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ ধারণ করে করোনাভাইরাস। দেশটিতে করোনায় প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ মারা গেছে। এতে আক্রান্ত হয়েছে দুই লাখ ৪৩ হাজারের বেশি মানুষ। তবে ইউরোপের অন্য দেশগুলোর মতো ইতালিও এই পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। দেশটিতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলতে শুরু করেছে।

গত মাস থেকে ইতালিতে বিশেষ ফ্লাইটে বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের প্রবাসীরাও ফিরতে শুরু করেছিলেন। তাদের মাধ্যমে দেশটিতে বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যে নতুন করে করোনার সংক্রমণ ঘটে। এদিকে বাংলাদেশ থেকে ইতালি যাওয়া একটি বিশেষ ফ্লাইটের ২১ যাত্রী করোনা পজিটিভ শনাক্ত হন। এ নিয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া শুরু হয় ইউরোপের এ দেশটিতে। সেই সঙ্গে আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত হন বাংলাদেশিরা।

বেশ কয়েক বছর ধরে ইতালির রোমে বসবাস করছেন পাভেল রহমান। তিনি ডয়েচে ভেলেকে বলেন, ‘লকডাউনের সময় বাংলাদেশিরা এখানে তেমন একটা আক্রান্ত হননি। কিন্তু এখন পুরো পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। আগে আমরা ইতালিয়ানদের দেখে এড়িয়ে চলতাম। এখন তারা আমাদের এড়িয়ে চলে।’

অভিযোগ উঠেছে, বাংলাদেশিরা টাকার বিনিময়ে করোনাভাইরাস পরীক্ষার ভুয়া সার্টিফিকেট নিয়ে ইতালি ফিরেছেন। অনেকেই ফেরার পর আইসোলেশনের নিয়ম মানেননি, যে কারণে তারা সমালেচিত হচ্ছেন তারা।

ভেনিসে বসবাসরত নীপা বলেন, ‘চার-পাঁচ মাস ঘরে বন্দি ছিলাম। পরিস্থিতির এখন অনেকটা উত্তরণ হয়েছে। কিন্তু ভুয়া সার্টিফিকেট নিয়ে যারা এসেছে তাদের কারণে ইতালিতে আমরা বাঙালিরা এখন খুবই লজ্জায় রয়েছি।’

ভেনিসে বাংলা ভাষার একটি স্কুলের প্রিন্সিপাল সৈয়দ কামরুল সরোয়ার। তিনিও একই পরিস্থিতির শিকার। কামরুল সরোয়ার বলেন, ‘৩০ বছর ধরে আমি এখানে আছি। কিন্তু আমাদের বর্তমান বাংলাদেশের কমিউনিটির অবস্থা শোচনীয়। ইতালিয়ানদের কাছে আমরা অনেক হেয় হয়েছি।’

ভেনিসে ব্যবসা রয়েছে মোহাম্মদ আলীর। তিনি সেখানে বাংলাদেশিদের একটি মসজিদেরও প্রধান। তিনি বলেন, ‘লকডাউনের পর আমরা বলতে গেলে এখন করোনামুক্ত হয়ে গিয়েছিলাম। এখন পর্যটক আসা শুরু হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে কিছু লোক আসলো। তাদের অনেকেই কোয়ারান্টাইন মানেননি। আমাদের ভাবমূর্তি এখানে অনেক নষ্ট হয়ে গেছে।’

মোহাম্মদ আলী আরও জানান, ‘নিজেদর দক্ষতা আর সততা দিয়ে ইতালিতে বাংলাদেশিরা অনেক সুনাম অর্জন করেছিলেন। কিন্ত অল্প কয়েকজনের কারণে তা নষ্ট হয়ে গেছে। এখন ইতালিয়ানরা আমাদের দেখলেই বলে ভাইরাস। আমরা একটা হেরেজমেন্টের মধ্যে পড়ে গেছি।’

তিনি বলেন, ‘এ অবস্থা থেকে উত্তরণে আমরা বাঙালি কমিউনিটিরা বৈঠক করছি। আগামীতে কনস্যুলারদের ডেকে বড় আকারে বৈঠক করবো। পরবর্তীতে এমন ঘটনা যাতে আর না ঘটে সেই বিষয়ে আমরা কাজ করবো।’

করোনার নেগেটিভ সার্টিফিকেটের জালিয়াতির কারণে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ থেকে যেকোনো সনদের ক্ষেত্রে ইতালি, তথা ইউরোপের সব দেশে বিপাকে পড়তে হবে প্রবাসীদের। এ ঘটনায় শুধু ইমেজ সংকটেই পড়েছেন না প্রবাসীরা, কাজের ক্ষেত্রেও নানা সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন তারা। যখন সবকিছু স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে, তখন অনেকেই তাদের কর্মক্ষেত্রে যোগ দিতে পারছেন না প্রবাসীরা।

রোমে বসবাসরত আরেক কাপড়ের ব্যবসায়ী আহসান বলেন, ‘ইতালির অনেক বিখ্যাত রেস্টুরেন্টগুলোতে বাংলাদেশিরা কাজ করেন। তাদের সঙ্গে এখন স্থানীয়রা কাজ করতে চাচ্ছেন না। তাদেরকে এখন বাসায় থাকতে হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখন অনেকেরই কাজ নেই। কিছু কিছু কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্ত বাংলাদেশিরা করোনা আক্রান্ত হওয়ায় তারা আবার বিপাকে পড়েছেন।’

সর্বশেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০২০, ১৩:১১
Desk
এড্যমিন

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও