দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় আওয়ামী লীগকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে সুযোগসন্ধানী সুবিধাভোগীরা। এ সুবিধাভোগীরা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের কর্মকাণ্ডে দল হিসেবে আওয়ামী লীগ ও সরকারের ভাবমূর্তি প্রশ্নের মুখে ফেলছে। এমনই এক সুবিধাভোগী ও ‘দুধের মাছি’ রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদ করিম ওরফে মোহাম্মদ সাহেদ, যার মুখোশ সম্প্রতি খসে পড়েছে জাতির সামনে। আওয়ামী লীগের পরিচয় ব্যবহার করে সাহেদের অনৈতিক কার্যকলাপ ও করোনার চিকিৎসায় তার হাসপাতালের জালিয়াতি ক্ষমতাসীন দলটির নেতাদের অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় সাহেদ করিমদের মতো সুযোগসন্ধানী সুবিধাভোগীরা আওয়ামী লীগের বলয়ের মধ্যে আবর্তিত হওয়ার চেষ্টা করছে। আর এসব সুযোগসন্ধানী সুবিধাভোগীদের বুঝে না বুঝেই আশ্রয় দিচ্ছেন দলের কোনো কোনো নেতা। যার জেরে দল ও সরকারের ভাবমূর্তি প্রশ্নের মুখে পড়ে।
আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা বলেন, এসব সুযোগসন্ধানী সব সময়ই থাকে। তবে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় সুযোগসন্ধানী সুবিধাভোগীদের বলয় গড়ে উঠেছে এমনটা বলা যাবে না। একইসঙ্গে এ ধরনের সুযোগসন্ধানী, সুবিধাভোগী, প্রতারকদের আওয়ামী লীগ আরও সতর্কভাবে দেখবে। পাশাপাশি সরকারের ভাবমূর্তিকে যেন নষ্ট করতে না পারে সে বিষয়েও অধিক সতর্ক অবস্থান গ্রহণ করা হয়েছে।
সাহেদ দীর্ঘদিন ধরে নিজেকে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য বলে পরিচয় দিয়ে আসছিলেন এবং এ পরিচয়েই তিনি বিভিন্ন টেলিভিশনের টক-শোতে অংশ নিচ্ছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি তার মালিকানাধীন রিজেন্ট হাসপাতালে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা ছাড়াই রিপোর্ট দেয়ার জালিয়াতি র্যাবের অভিযানে ধরা পড়লে সাহেদ পালিয়ে যান। পরে রিজেন্টের দুই হাসপাতাল সিলগালা করে দেয়া হয়। অবশ্য ক’দিন পরেই সীমান্ত থেকে সাহেদকে ধরে ঢাকায় নিয়ে আসে র্যাব। তিনি এখন রিমান্ডে রয়েছেন।
আওয়ামী লীগের পরিচয়ে সাহেদের কাযর্কলাপ এবং আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে সাহেদের বিভিন্ন সময়ে তোলা ছবি সামাজিক যোগাযোগ ছড়ানোর কারণে ক্ষমতাসীন দলটির নেতাদের অস্বস্তিতে ভুগতে হচ্ছে বেশি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, একটা সরকার ক্ষমতায় থাকলে নানাভাবে সেখানে অনুপ্রবেশ ঘটে। কিন্তু প্রশ্নটা হলো, এটা সরকার পালাপোষা করছে নাকি এর মূলোৎপাটন করতে চাইছে, সেটাই দেখার বিষয়।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বলেন, ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে সব সময়, সব দেশে একটি সুবিধাভোগী মহল তৈরি হয়। আওয়ামী লীগও অনেক দিন ক্ষমতায় থাকার কারণে এ দলে তারা জায়গা করে নিয়েছে। সুবিধাভোগীদের সার্টিফায়েড করার জন্য আমাদের দলে কিছু নেতা আছে। ফলে তারা খুব দ্রুত জায়গা পেয়ে যায় এবং দাপুটে হয়ে ওঠে। শেখ হাসিনার আস্থা ও বিশ্বাসের সুযোগ নেয় কিছু মানুষ।
দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ একটা বিশাল দল। আওয়ামী লীগ একটা হাতিসম। হাতের ওপরে কোথা থেকে একটা মশা এসে গায়ের উপরে পড়েছে সেই মশার খবর হাতির রাখা যেমন কষ্টসাধ্য ব্যাপার, আবার যখন সে মশা চলে যায় তখন হাতির পক্ষে মশার খবর রাখা অসম্ভব। এই ধরনের মতলববাজ, প্রতারক, ধান্দাবাজরা ক্ষমতাসীন দলে কোনো রকম একটু আশ্রয় নেয়ার জন্য নানাবিধ ফন্দি-ফিকির করে। কিন্তু চূড়ান্ত বিজয়ে তাদের এক সময় প্রকাশিত হতে হয়, ধরা পড়তে হয়। সাহেদের গ্রেফতার তারই প্রমাণ।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, দল সরকারে থাকলে সরকারি সুযোগ-সুবিধা নেয়ার জন্য কিছু খারাপ লোক তো চেষ্টা করতেই পারে। খারাপ লোক তো সব জায়গায় সব সময়ই থাকে। প্রতারক চক্র থাকে। প্রতারকদের হাত থেকে আওয়ামী লীগকে রক্ষা করতে হবে। তারা যেন সরকারেরও ভাবমূর্তি নষ্ট না করে সে বিষয়টি আমরা আরও সতর্কভাবে দেখবো। তবে কোনো প্রতারক গোষ্ঠী গড়ে উঠছে এইটা বলা ঠিক হবে না।
সর্বশেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০২০, ০৩:১৫