শেষ পর্যন্ত ফ্লাইট চলাচলের জন্য আমেরিকা ও ফ্রান্সের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ভারত। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত শুক্রবার থেকে ওই দুই দেশের সঙ্গে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করেছে ভারত। ভারতের বেসামরিক বিমানমন্ত্রী হরদীপ সিং পুরী গণমাধ্যমে বলেন, যতদিন পর্যন্ত স্বাভাবিকভাবে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা শুরু হচ্ছে না, ততদিন দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমেই বিভিন্ন দেশের মধ্যে ফ্লাইট পরিচালনা পরিষেবা চালাতে হবে। তবে সেই সঙ্গে বিভিন্ন দেশের যেসব স্বাস্থ্যবিধি রয়েছে, সেটাও বিবেচনায় রাখতে হবে। জার্মানি ও ব্রিটেনের সঙ্গেও এ ধরনের দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরের চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য কাজী ওয়াহেদুল আলম বলেন, নভেল করোনাভাইরাসের কারণে ভ্রমণ ও পর্যটন খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ছে। এটি কতদিন চলবে তা-ও নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় নতুন কিছু ভাবতে হবে, অন্তত যতদিন পর্যন্ত না এর ভ্যাকসিন পাওয়া যাচ্ছে। নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষায় এরই মধ্যে অনেক দেশ দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করেছে। প্রতিবেশী দেশ ভারত এরই মধ্যে কয়েকটি দেশের সঙ্গে চুক্তি করেছে।
তিনি বলেন, শুনেছি চিকিৎসা ও ব্যবসায়িক প্রয়োজনে নিজেদের নাগরিকরা যাতে একে অপরের দেশে যেতে পারে, এজন্য বাংলাদেশের সঙ্গেও ভারত এ ধরনের চুক্তি করতে যাচ্ছে। বাংলাদেশকেও উদ্যোগ নিতে হবে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ডসহ যেসব দেশের সঙ্গে স্বার্থ জড়িত তাদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করা।
নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর গত মার্চ থেকে বিশ্বব্যাপী যোগাযোগ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। সম্প্রতি স্বাস্থ্যবিধি মেনে আকাশপথে যোগাযোগ শুরু হলেও অনেক দেশই রয়েছে নিষিদ্ধের তালিকায়। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর নাগরিকদের নতুন করে ভিসা দেয়া বন্ধ রাখার পাশাপাশি সরাসরি ফ্লাইট চলাচল বন্ধ রেখেছে অনেক দেশ। এ অবস্থায় দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে কিছু সীমাবদ্ধতা ও নিয়মের মধ্যে থেকে নিজেদের নাগরিকদের চলাচল উন্মুক্ত করছে অনেক দেশ। এভিয়েশনের পরিভাষায় যেটির নাম দেয়া হয়েছে ট্রাভেল বাবল।
সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়াও দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে নিজেদের নাগরিকদের ভ্রমণের পথ সৃষ্টি করেছে। এটিকে তারা রেসিপ্রোকাল গ্রিন লেন চ্যানেল বলছে। দুদেশের চুক্তি অনুযায়ী আগামী ১০ আগস্ট থেকে শর্তসাপেক্ষে ‘পারস্পরিক গ্রিন লেন’ দিয়ে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার নাগরিকদের স্বল্পমেয়াদি প্রয়োজনীয় ব্যবসায়িক ও সরকারি ভ্রমণের জন্য সীমান্ত অতিক্রম করতে দেবে। একই সঙ্গে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া দীর্ঘমেয়াদি অভিবাসন ভিসা আছে এমন নাগরিকদের কাজের জন্য প্রবেশের অনুমতি দেবে। এসব ভিসাধারীরা তিন মাস পর স্বল্প সময়ের জন্য তাদের দেশে ফিরে যেতে পারবে ও আবার কাজে প্রবেশ করতে পারে।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্রে জানা গেছে, ১৭ জুলাই থেকে ঢাকা-মালয়েশিয়া রুটে ফ্লাইট চালু করেছে মালয়েশিয়া এয়ারলাইনস। ফ্লাইট চালু হলেও আপাতত বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়া এয়ারলাইনস ট্রানজিট যাত্রী, মালয়েশীয় নাগরিক, দেশটির নাগরিককে বিয়ে করেছেন এমন ব্যক্তি, যারা সেকেন্ড হোম করেছেন, স্টুডেন্টস ও প্রফেশনাল ভিসায় যারা আছেন, শুধু তারাই এ মুহূর্তে ভ্রমণ করতে পারবেন। বাংলাদেশী প্রবাসী শ্রমিকরা এখনই মালয়েশিয়ায় যেতে ও দেশে ফেরার সুযোগ পাচ্ছেন না। একইভাবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে চালু হওয়া বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইটে বাংলাদেশী যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রেও রয়েছে নানা বিধিনিষেধ।
এদিকে নভেল করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশীদের জন্য ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা রয়েছে সৌদি আরব, কাতার, বাহরাইন, ওমানসহ মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সব দেশেও। সম্প্রতি বাংলাদেশে ফ্লাইট চালু করেছে কাতার এয়ারওয়েজ, এমিরেটস এয়ারলাইনস ও টার্কিশ এয়ারলাইনস। তবে কেবল ট্রানজিট যাত্রীই পরিবহন করছে এয়ারলাইনসগুলো। বাংলাদেশীদের জন্য একই রকম ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা রয়েছে চীন, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এমনকি প্রতিবেশী দেশ ভারতেও। এ অবস্থায় বাংলাদেশকেও বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির উদ্যোগ নিতে হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সর্বশেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০২০, ১৯:৫৪
পাঠকের মন্তব্য