বাংলাদেশি যাত্রীদের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার ঘটনায় বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইতালি, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া।
যদিও ওই ব্যক্তিরা কখন, কিভাবে কভিড-১৯ সংক্রমিত হয়েছিলেন তা স্পষ্ট নয়।
তবে তাঁরা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্ক্রিনিং পেরিয়ে যাওয়ায় দেশের প্রধান বিমানবন্দরের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশগামী বাংলাদেশিদের কভিড-১৯ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করেছে সরকার।
কিন্তু শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বহির্গামী যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য স্ক্যানারসহ নির্ধারিত ডাক্তার ও নার্স নেই।
আবার করোনা সনদ পরীক্ষা নিয়েও রয়েছে সমন্বয়হীনতা।
এ অবস্থায় দ্রুত দুজন চিকিৎসক দিয়ে বহির্গামী যাত্রীদের পরীক্ষা করাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও।
ডাক্তার, নার্স, থার্মাল স্ক্যানারসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ছাড়াই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে শুরু হয়েছে বহির্গামী যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা।
‘বহির্গামী হেলথ ডেস্কে’ তেমন কোনো অবকাঠামো না থাকায় করোনামুক্তির সার্টিফিকেট দেখতেও হিমশিম খাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
বিমানবন্দরে বহির্গামী যাত্রীদের স্বাস্থ্য ও করোনা সনদ পরীক্ষার প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে শাহজালাল বিমানবন্দরে দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ বলেন, ‘নির্ধারিত ডাক্তার, নার্স, থার্মাল স্ক্যানার এখনো পাইনি। এতে পরিস্থিতি সামাল দিতে আমাদের সমস্যা হচ্ছে।
হাতের স্ক্যানার দিয়ে তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হচ্ছে।
এ ছাড়া বিমানবন্দরে সফটওয়্যার কিংবা সার্ভারসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর কোনো কিছুই নেই।
আমরা বহির্গামী যাত্রীদের তাপমাত্রা পরীক্ষাসহ করোনার কোনো লক্ষণ আছে কি না তা দেখছি।’
হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ এইচ এম তৌহিদ উল-আহসান বলেন, ‘করোনা সনদ দেখার দায়িত্ব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের।
তারা যে ব্যবস্থাগুলো নিচ্ছে তাতে আমাদের দিক থেকে সহযোগিতা করছি। বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিপারচার ডেস্ক ও অন্যান্য সুবিধা ছিল না, যা স্থাপন করা হয়েছে। তারা বলছে, শিগগিরই থার্মাল স্ক্যানারসহ অন্য বিষয়গুলোর সুরাহা করবে।’
তিনি বলেন, বিমানবন্দরে বৃহস্পতিবার থেকেই করোনা নেগেটিভ দেখা শুরু হয়েছে।
প্রথম দিনে এমিরেটস ও চায়না সাউদার্নের চার শতাধিক যাত্রীর করোনা সনদ পরীক্ষা করে পাঠানো হয়েছে।
এখনো থার্মাল স্ক্যানার বসানো যায়নি। আপাতত হাতে ব্যবহৃত স্ক্যানার দিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে।
করোনা আক্রান্ত যাত্রীদের এভাবে পার পেয়ে যাওয়া অত্যন্ত বিপজ্জনক মনে করেন বিমান চলাচল বিষয়ে বিশ্লেষক ‘বাংলাদেশ মনিটর’ এর সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুল আলম।
তিনি বলেন, ‘এভাবে দরজা খোলা রাখলে যে কেউ পার পেয়ে যাবে।
করোনা আক্রান্ত যাত্রী যদি বিদেশে গিয়ে ফের শনাক্ত হন তাহলে আমরা বহির্বিশ্ব থেকে আরো নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হব।’
এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে চিঠি দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের পশ্চিম ইউরোপ এবং ইইউ উইংয়ের মহাপরিচালক আন্দালিব ইলিয়াস স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, সম্প্রতি রোমে অবতরণের পর ইতালির স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃক বেশ কয়েকজন যাত্রীকে কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে।
এ ছাড়া প্যারিসে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিশেষ ফ্লাইটের একজন যাত্রীকে কভিড-১৯ রোগী হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে।
ফলে ইতালি, ফ্রান্স এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সেনজেন ভিসা রেজিমভুক্ত অন্যান্য দেশে বাংলাদেশ থেকে যেতে আগ্রহী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদান না করার এবং এরই মধ্যে ভিসাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের প্রবেশের অনুমতি না দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
২৩ জুলাই থেকে আকাশপথে বিদেশ গমনকারীদের জন্য কভিড-১৯ (নেগেটিভ) পরীক্ষার সনদ বাধ্যতামূলক করেছে সরকার।
বিমানযাত্রার ৭২ ঘণ্টার আগে কোনো নমুনা জমা নেওয়া হবে না এবং ২৪ ঘণ্টা আগে রিপোর্ট ডেলিভারির ব্যবস্থা করতে হবে।
নমুনা দেওয়ার সময় পাসপোর্টসহ যাত্রীদের বিমান টিকিট ও পাসপোর্ট উপস্থাপন এবং নির্ধারিত ফি পরিশোধ করতে হবে (সাড়ে তিন হাজার ও সাড়ে চার হাজার টাকা)।
বর্তমান পরিস্থিতিতে যাত্রী কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন এভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এওএবির) মহাসচিব ও নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান।
তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘করোনাভাইরাসে আকাশপথে যাত্রী পরিবহনে বেবিচক গাইডলাইন দিয়েছে, যা মেনে চলছি। কিন্তু নানা শর্তের বেড়াজালে যাত্রীরা বিদেশ গমনে নিরুৎসাহিত হলে বড় ক্ষতির মুখে পড়বে বিমান সংস্থাগুলো।’
পাঠকের মন্তব্য