কাতারের পর দেশেও সাজা ভোগের শঙ্কা

ছবিঃ ইন্টারনেট থেকে নেয়া
ছবিঃ ইন্টারনেট থেকে নেয়া

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি ও পবিত্র রমজান উপলক্ষে মানবিক কারণে চলতি বছর দুই দফায় কাতারের কারাগারে বন্দী বিভিন্ন দেশের দণ্ডপ্রাপ্ত অভিবাসীদের ক্ষমা ঘোষণা করেন কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আলথানি। তাঁদের মধ্যে দুই দফায় প্রায় ৯০ জন প্রবাসী বাংলাদেশি কারাবন্দী রয়েছেন। খবর দৈনিক প্রথম আলোর।

কাতারের আমিরের বিশেষ ক্ষমা ঘোষণায় মুক্তি পেয়ে গত ২৫ জুন ও ৬ জুলাই কাতার এয়ারওয়েজের দুটি বিশেষ ফ্লাইটে ৭৩ জন প্রবাসী বাংলাদেশে গেছেন। বাকিরা ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন। আজ মঙ্গলবার আরেকটি ফ্লাইটে আরও কয়েকজন মুক্তি পাওয়া বন্দীর দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

আমিরের ঘোষণার পর কাতারের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে প্রথম দফায় যাঁরা বাংলাদেশে গিয়েছিলেন, ঢাকায় অবতরণের পর তাঁদের সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে উত্তরা দিয়াবাড়িতে কোয়ারেন্টিন ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়।

তবে কোয়ারেন্টিনের মেয়াদ শেষে বিশেষ অভিযোগে তাঁদের পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয় এবং ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় আটক দেখানো হয়। পরে ৪ জুলাই ঢাকা মহানগর হাকিম কাতারফেরত ৩৯ জনসহ কুয়েত ও বাহরাইন থেকে ফেরা মোট ২১৯ প্রবাসীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

সাজা মওকুফ হওয়া প্রবাসীরা দেশে ফিরে আটকের ঘটনায় কাতারে অপেক্ষমাণ ক্ষমাপ্রাপ্ত প্রবাসীদের মধ্যে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়ে। কাতারে অপরাধ করায় তাঁরা যে সাজা পেয়েছিলেন, সেটির অর্ধেক বা অর্ধেকের বেশি মেয়াদ পার হওয়ার পর আমিরের বিশেষ ক্ষমায় এখন তাঁরা দেশে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। তাঁদের আশঙ্কা, দেশে যাওয়ার পর অন্যদের মতো তাঁদের ফের আটক করা হতে পারে। এতে অনিশ্চিত হয়ে পড়বে তাঁদের ভবিষ্যৎ।

ক্ষমা পাওয়া কয়েকজন বন্দী কাতারের কারাগার থেকে বিশেষ মাধ্যমে আলাপকালে এমন উদ্বেগের কথা জানান।

দেশে পাঠানোর প্রক্রিয়ায় কাতারের কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে সরিয়ে শতাধিক বাংলাদেশি বন্দীকে বর্তমানে বিশেষ পুলিশের তত্ত্বাবধানে রাখা হয়েছে, যা কাতারে সফর জেল হিসেবে পরিচিত। সেখান থেকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ২৬ বছর বয়সী সিলেটের এক তরুণ প্রবাসী জানান, দুই বছর আগে তাঁর এক বন্ধু তাঁকে মাদক (গাঁজা) মামলায় ফাঁসিয়ে দেন। এতে কাতারের আদালতে তাঁর দুই বছরের সাজা হয়। ২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর তিনি গ্রেপ্তার হন।

এক বছরের বেশি সময় ধরে সাজা ভোগ করার পর চলতি বছর আমিরের বিশেষ ক্ষমা পাওয়া বন্দীদের তালিকায় তাঁর নাম অন্তর্ভুক্ত হয়। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, সাড়ে তিন লাখ টাকা খরচ করে কাজের জন্য কাতারে এসেছিলেন। কিন্তু জীবনটা শেষ হয়ে গেল। দেশে তাঁর মা-বাবা ও পরিবার অনেক কষ্টে আছে। এখন যদি দেশে গিয়ে আবারও কারাগারে যেতে হয়, তবে ভাগ্যে কী নেমে আসবে, তা ভাবতে পারছেন না।

আলাপকালে এই তরুণের সঙ্গে থাকা আরও বেশ কয়েকজন ক্ষমাপ্রাপ্ত বাংলাদেশি প্রবাসী বন্দী বলেন, কয়েক দিন ধরে বাংলাদেশে তাঁদের অনেকের বাড়িতে গিয়ে পুলিশ তথ্য যাচাই করছে।

আমিরের ক্ষমাপ্রাপ্ত প্রবাসী ছাড়াও অনেক বাংলাদেশিকে কাতারের কারাগার থেকে দেশে পাঠানো হচ্ছে, যাঁদের সাজার মেয়াদ শেষ কিংবা যাঁরা বৈধ আইডি না থাকায় ধরা পড়েছেন, তাঁদেরও নিয়মমাফিক প্রক্রিয়ায় দেশে পাঠানো হচ্ছে।

গাড়ির টায়ার চুরির অভিযোগে দণ্ডপ্রাপ্ত এক প্রবাসী বন্দী বলেন, তিনি ১০ মাস ধরে কারাগারে বন্দী। তাঁর ছয় মাসের সাজা হয়েছিল। কিন্তু করোনার কারণে বাড়তি চার মাস তাঁকে বন্দী থাকতে হচ্ছে। তিনি শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, দেশে ফেরার পর আটক করা হলে অনিশ্চয়তায় পড়ে যাবেন তিনি।

আমিরি ক্ষমায় মুক্তিপ্রাপ্ত আরও কয়েকজন জানতে চান, দেশে ফেরার পর আটক হলে তাঁরা এ বিষয়ে প্রতিকার পেতে কার কাছে অভিযোগ জানাবেন, সে বিষয়ে তাঁদের কোনো ধারণা নেই। এ বিষয়ে তাঁরা বাংলাদেশে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সহায়তা কামনা করেন।

কাতারে ক্ষমাপ্রাপ্ত বন্দীরা দেশে ফেরার পর আটকের বিষয়টি সম্পর্কে বাংলাদেশ দূতাবাস অবগত নয় বলে জানান রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমদ। তিনি বলেন, ‘আমি পত্রিকায় দেখেছি, কিন্তু এ সম্পর্কে আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই।’

তবে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনের ব্যাপারটি নিশ্চিত করে দূতাবাসের প্রথম সচিব মাহবুর রহমান বলেন, কাতারে যাঁরা বন্দী আছেন, দেশে ফেরার পর সবাইকে প্রথমে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে নেওয়া হবে। এরপর যদি কর্তৃপক্ষ মনে করে, তবে তাদের সেখান থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে অথবা যে অপরাধে তাঁরা কাতারে বন্দী ছিলেন, সেটির অধিকতর তদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২০, ২৩:০৬
Desk
এড্যমিন

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও