উইঘুরদের চীনের হাতে তুলে দিচ্ছেন ‘রক্ষাকর্তা’ এরদোগান

উইঘুরদের চীনের হাতে তুলে দিচ্ছেন ‘রক্ষাকর্তা’ এরদোগান
উইঘুরদের চীনের হাতে তুলে দিচ্ছেন ‘রক্ষাকর্তা’ এরদোগান

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েফ এরদোগান মুসলিম বিশ্বের স্বঘোষিত রক্ষাকর্তা। মুসলিমদের ‘স্বার্থ’ বিবেচনা করে বিভিন্ন সময় তাকে ভারতসহ নানা দেশের বিরুদ্ধে কথা বলতে দেখা গেছে। যদিও উইঘুরদের ওপর চীনা নির্যাতনের প্রশ্ন যখন আসে তখন এই রক্ষাকর্তা একদম চুপ। দীর্ঘসময় ধরে উইঘুর মুসলিমদের ওপর নির্যাতন নিয়ে ইউরোপ ও অ্যামেরিকা যখন স্বরব তখন এ নিয়ে সামান্য প্রতিবাদও জানাতে দেখা যায়নি এরদোগানকে।

উল্টো ২০১৯ সালে তিনি দাবি করেন, শিনজিয়াং এ সবাই শান্তিতে বাস করছে। এ মাসে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কাউন্সিলে ২২টি দেশ আবেদন জানায় যাতে উইঘুরদের ওপর চীনে নির্যাতন সম্পর্কে বিস্তর তদন্ত হয়। এই রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ছিল না তুরস্ক। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের পর এখন নতুন করে বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে।

এতে কীভাবে উইঘুরদের পুনরায় চীনে ফেরত পাঠাতে চীনকে সাহায্য করছে তুরস্ক তা বেড়িয়ে আসে।
লন্ডনভিত্তিক প্রভাবশালী বৃটিশ গণমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের সাম্প্রতিক এক অনুসন্ধান থেকে জানা গেছে, সুচতুর উপায়ে পালিয়ে আসা উইঘুর মুসলিমদের চীনে ফেরত পাঠাচ্ছে তুরস্ক। টেলিগ্রাফের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, তুরস্ক প্রথমে উইঘুরদের শনাক্ত করে।

এরপর তাদেরকে অন্য একটি রাষ্ট্রে পাঠিয়ে দেয়া হয়। সেখান থেকে চীন উইঘুরদের ফিরিয়ে নিয়ে আসে। এ জন্য বেছে নেয়া হয় তাজিকিস্তানকে। চীন থেকে পালিয়ে যাওয়া উইঘুরদের তাজিকিস্তানের কাছে হস্তান্তর করে তুরস্ক। চীনের আবেদনে তাজিকিস্তান সহজেই সাড়া দেয়। ফলে কোনো ঝামেলা ছাড়াই সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার উইঘুর মুসলিমদের আবার শিনজিয়াংয়ে নিয়ে আসে চীন।

এক হিসেবে জানা গেছে, তুরস্কে রিফিউজি হয়ে আছেন প্রায় অর্ধলক্ষ উইঘুর মুসলিম। তারা চীনের অত্যাচার থেকে বাঁচার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু ড্রাগনের লম্বা হাত তাদের কাছে পৌঁছে গেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে উইঘুরদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলোও। শিনজিয়াং থেকে পালিয়ে আসা উইঘুর মুসলিমদের চীন নিজের জন্য হুমকি মনে করে। এ জন্য যারা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে তাদেরকে পুনরায় শিকারে হন্যে হয়ে আছে দেশটি।

শিনজিয়াংয়ে চীনের দমন পীড়নের খবর বিশ্বের কাছে পৌঁছানোর একমাত্র উপায় এই উইঘুররা। পালিয়ে আসা উইঘুরদের মধ্যে যারা যারা চীনের অত্যাচার নিয়ে মুখ খোলেন তাদেরকেই টার্গেট করা হয় প্রথমে। এরকম একজন ছিলেন এনভার তুরদি। তিনি চীনা সরকারের কার্যক্রম নিয়ে পশ্চিমা গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। তখন তাকে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য তুরস্কের কাছে নাম পাঠায় চীন। এক পর্যায়ে তাকে তুর্কি কর্মকর্তারা জেরা এবং পরবর্তিতে নির্বাসিত করে।

টেলিগ্রাফের কাছে উইঘুর মুসলিমরা জানিয়েছেন, তারা ভয় পাচ্ছেন তুরস্ক সরকার তাদের আপন জনদের তাজিকিস্তান হয়ে চীনে পাঠিয়ে দেবে। দুই সন্তানের মা আলমুজি কুয়ানহান চীন থেকে পালিয়ে তুরস্কে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তবে তার আত্মীয়রা বলছেন, তাকে চীনে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে আবার। তুরস্কের ইজমিরের একটি ডিপোর্টেশন সেন্টারে কুয়ানহানকে আটকে রাখা হয়েছিল। সেখান থেকেই তাকে তাজিকিস্তানে পাঠিয়ে দেয় তুরস্ক।

এর আগে মিডল ইস্ট আইয়ের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছিল, তুরস্ক উইঘুরদের চীনে পাঠিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছে। গণমাধ্যমটি জানিয়েছে, তারা এমন তথ্য পেয়েছে যে তুরস্ক সরকার অনেক উইঘুরের তুরস্কে অবস্থানের আবেদন বাতিল করে দিয়েছে। তুরস্ক জানিয়েছে, উইঘুররা চাইলে আবারো আবেদন করতে পারবে তবে তা শুধুমাত্র চীন থেকেই আবেদন করতে হবে। কিন্তু তুরস্কে থাকা উইঘুরদের পক্ষে চীন ফেরত গিয়ে আবেদন করা অসম্ভব। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, তুরস্কের এই নতুন নিয়মের কারণে তাদের চীনের কারাগারে বন্দি থাকতে হবে।

সর্বশেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২০, ১১:০০
Desk
এড্যমিন

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও