জম্পেস খবর: বাংলাদেশমুখী মার্কিন পোশাক ক্রেতারা

জম্পেস খবর: বাংলাদেশমুখী মার্কিন পোশাক ক্রেতারা
জম্পেস খবর: বাংলাদেশমুখী মার্কিন পোশাক ক্রেতারা

বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি বাণিজ্যের গতি দুর্বল বলে জানিয়েছেন মার্কিন ক্রেতারা। পাশাপাশি শিল্পের সামাজিক ও শ্রম কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থাপনায় এখনো ঝুঁকি দেখছেন তারা। তবে সোর্সিং কস্ট বা পণ্য ক্রয়বাবদ ব্যয় বিবেচনায় বাংলাদেশ এখনো আকর্ষণীয়। মূলত সস্তায় পণ্য কিনতেই ঝুঁকি সত্ত্বেও বাংলাদেশমুখী রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক পণ্যের ক্রেতারা। মার্কিন পোশাক ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের নির্বাহীদের অংশগ্রহণে পরিচালিত এক জরিপের ভিত্তিতে তৈরি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

‘২০২০ ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি বেঞ্চমার্কিং স্টাডি’ শীর্ষক জরিপটি করেছেন ইউনিভার্সিটি অব ডেলাওয়ারের ফ্যাশন অ্যান্ড অ্যাপারেল স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. শেং লু। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংগঠন ইউনাইটেড স্টেটস ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (ইউএসএফআইএ) এ কাজে তাকে সহযোগিতা করেছে। ২০১৪ সাল থেকে এমন জরিপে যুক্ত ইউএসএফআইএ। এ বছরের জরিপ প্রতিবেদনের সপ্তম সংস্করণ প্রকাশ হয়েছে ৪ আগস্ট। যুক্তরাষ্ট্রে ফ্যাশন পণ্য বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর যেসব নির্বাহী পোশাক ক্রয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত (সোর্সিং এক্সিকিউটিভ), তাদের দেয়া বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরের ভিত্তিতে জরিপ প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে, যেখানে বিভিন্ন দেশের পোশাক শিল্প সম্পর্কে তাদের মতামত উঠে এসেছে।

কভিড-১৯-এর প্রভাবে পণ্য বিক্রি কমে যাওয়ার পাশাপাশি ব্যবসা পরিচালনা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন জরিপে অংশগ্রহণকারী নির্বাহীরা। নির্বাহীদের শতভাগই জানান, তারা কম-বেশি ক্রয়াদেশ বাতিল বা স্থগিত করেছেন। বাতিল-স্থগিত ক্রয়াদেশগুলোর সময়সীমা ২০২০ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত গড়াতে পারে বলে জানিয়েছেন জরিপে অংশ নেয়া অর্ধশত খুচরা বিক্রেতা, তবে ৪০ নির্বাহী জানিয়েছেন এ সময়সীমা ২০২০-এর চতুর্থ প্রান্তিক পর্যন্তও পৌঁছতে পারে। ক্রয়াদেশ বাতিল বা স্থগিত হওয়ার প্রভাব সবচেয়ে বেশি ফেলেছে চীন, বাংলাদেশ ও ভারতের সরবরাহকারী ভেন্ডরদের ওপর।

জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৬০ শতাংশের বেশি জানিয়েছেন, তারা চীন, বাংলাদেশ ও ভারতে দেয়া ক্রয়াদেশ বাতিল-স্থগিত করেছেন। জরিপে অংশগ্রহণকারী ৭০ শতাংশই চীন থেকে ক্রয়াদেশ বাতিল-স্থগিত করার তথ্য দিয়েছেন। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ হার ৬৫ শতাংশ আর ভারতের ক্ষেত্রে তা ৬০ শতাংশ। এছাড়া ভিয়েতনাম থেকে ৪৫ শতাংশ এবং কম্বোডিয়া থেকে ৩০ শতাংশ মার্কিন ক্রেতা ক্রয়াদেশ বাতিল-স্থগিত করেছেন।

জরিপে অংশগ্রহণকারী মার্কিন ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহীদের উত্তরের ভিত্তিতে প্রতিবেদনে শীর্ষ ১০ ক্রয় গন্তব্যের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। ২০১৯ সালের জরিপে অংশগ্রহণকারীরা মোট ৪৮ দেশ থেকে পোশাক কিনতেন। ২০২০ সালের জরিপে অংশগ্রহণকারী নির্বাহীরা মোট ৪৫টি দেশ থেকে পোশাক ক্রয় করেন বলে জানিয়েছেন। অংশগ্রহণকারীদের শতভাগ চীন থেকে পোশাক কেনেন। ৯৫ দশমিক ২ শতাংশ ভিয়েতনাম থেকে এবং বাংলাদেশ থেকে ৮৫ দশমিক ৭ শতাংশ পোশাক ক্রয় করেন বলে জানিয়েছেন। এছাড়া ভারত, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া, ফিলিপাইনস ও শ্রীলংকা থেকে পোশাক ক্রয় করেন যথাক্রমে ৮১, ৭১ দশমিক ৪, ৬৬ দশমিক ৭, ৫৭ দশমিক ১ ও ৫২ দশমিক ৪ শতাংশ।

মার্কিন ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে সুবিধাভোগী চীন থেকে সোর্সিং (ক্রয়) কমে যাওয়ায় পণ্যের প্রাথমিক সরবরাহকারী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় থাকবে ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশ, জরিপে এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন অংশগ্রহণকারীরা। ২০১৯ সালের তুলনায় পোশাক সরবরাহকারী হিসেবে এশিয়ার দেশগুলোর ব্যবহার ২০২০ সালে মার্কিন ক্রেতারা বাড়িয়েছেন এমন তথ্য জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, পোশাক সরবরাহকারী হিসেবে ভিয়েতনামের ব্যবহার বেড়েছে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ, বাংলাদেশের ব্যবহার বেড়েছে ২৫ দশমিক ৭ শতাংশ, শ্রীলংকার ৪ দশমিক ৮ শতাংশ ও কম্বোডিয়ার ৩ দশমিক ৮ শতাংশ।

যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধ, কভিড-১৯-এর পাশাপাশি চীনে শ্রম ব্যয় বৃদ্ধির ফলে চীন থেকে মার্কিন ক্রেতাদের সরে যাওয়ার গতি ত্বরান্বিত হয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালের প্রথম পাঁচ মাসে মার্কিন বাজারে চীনের হিস্যা বা অংশ ৩০ শতাংশ থেকে নেমে ১৯ দশমিক ৩ শতাংশ হয়েছে। চীনের হারানো বাজার বাংলাদেশসহ নিয়েছে আসিয়ান সদস্য দেশ ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও ইন্দোনেশিয়া। এছাড়া চীনের বাজার ধরতে শুরু করেছে ভারতও।

জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, মার্কিন ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের নির্বাহীদের মতে রফতানি বাজারের প্রতি গতিশীল হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান দুর্বল। সোর্সিং কস্ট বা পণ্য ক্রয়বাবদ ব্যয়ে বাংলাদেশ শক্তিশালী। আবার সোস্যাল কমপ্লায়েন্স এবং পরিবেশ কমপ্লায়েন্সে বাংলাদেশের অবস্থান দুর্বল। মার্কিন ক্রেতাদের মত অনুযায়ী, ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত পণ্য ক্রয়বাবদ ব্যয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে সুবিধাজনক ছিল। চলতি বছরের জরিপেও ক্রেতারা বলেছেন, সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক মূল্য প্রস্তাব করা দেশের মধ্যে বাংলাদেশসহ আছে ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া, ভারত ও শ্রীলংকা।

এশিয়ার অন্য দেশগুলোর তুলনায় ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ট্যাগ গুরুত্বপূর্ণ মূল্য সুবিধা দেয় এমন তথ্য উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯ সালে মার্কিন বাজারে রফতানি হওয়া ৭৭ শতাংশ পোশাক পণ্য ছিল কটনভিত্তিক ‘মেড ইন বাংলাদেশ’। শ্রম ব্যয় ছাড়াও কটন সুতা-কাপড়ের স্থানীয় উৎপাদনের কারণে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ মূল্য সুবিধায় অবদান রাখছে। তবে কৃত্রিম বা ম্যান মেড ফাইবারের ক্ষেত্রে মূল্য সুবিধায় বাংলাদেশের অবদান বেশি নয় উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, এক্ষেত্রে নতুন ট্রেন্ড বা ধারা দেখা যাচ্ছে। ২০২০ সালের প্রথম পাঁচ মাসে মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের ম্যান মেড ফাইবার পোশাকের রফতানি বেড়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির নতুন চালিকাশক্তি হতে পারে ম্যান মেড ফাইবারের পোশাক—এমন প্রক্ষেপণও জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে।

বাংলাদেশ গার্মেন্ট বায়িং হাউজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী ইফতেখার হোসেন বলেন, বাংলাদেশ এখন ভালো পণ্য তৈরি করছে। সেই পণ্যগুলো আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন। এ কারণেই অনেক ক্রেতা বাংলাদেশমুখী হচ্ছেন। বাংলাদেশের সাপ্লাইচেইন আগের চেয়ে ভালো হয়েছে। বাংলাদেশের পণ্য বিপণন কৌশলও আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে। সার্বিকভাবে বাংলাদেশের পোশাক খাতসংশ্লিষ্টদের দক্ষতা অনেক বেড়েছে। বৈশ্বিকভাবে এখন স্বচ্ছতার বিশেষ গুরুত্ব তৈরি হয়েছে, এক্ষেত্রেও বাংলাদেশ আগের চেয়ে অনেক বেশি স্বচ্ছ। পাশাপাশি বাংলাদেশ টেকসই পণ্য তৈরির পথেও হাঁটতে শুরু করেছে। সব মিলিয়েই বাংলাদেশ থেকে পণ্য ক্রয়ের আগ্রহ বেড়েছে মার্কিন ক্রেতাদের।

সর্বশেষ আপডেট: ৭ আগস্ট ২০২০, ০৯:২৯
Desk
এড্যমিন

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও