স্বর্ণের দাম ভরিতে বেড়েছে এক বছরে ২৩ হাজার টাকা

স্বর্ণ
স্বর্ণ

এক বছর আগে যারা গহনা তৈরির জন্য সোনা কিনেছেন তারা প্রতি ভরিতে প্রায় ২৩ হাজার টাকা লাভ করেছেন। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) তথ্য এমনটিই বলছে। সংগঠনটির তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের এই সময়ে (৬ আগস্ট) এক ভরি ভালো মানের সোনার দাম ছিল ৫৪ হাজার ৫২৯ টাকা। আর বৃহস্পতিবার (৬ আগস্ট) সেই একই মানের সোনা বিক্রি হচ্ছে ৭৭ হাজার ২১৬ টাকায়। অর্থাৎ এক বছরে ভরিতে বেড়েছে ২২ হাজার ৬৮৭ টাকা।

এ প্রসঙ্গে বাজুসের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এক বছর আগের কেনা সোনা যদি কেউ এখন বিক্রি করতে চান তাহলে তিনি ২২ হাজার টাকারও বেশি লাভ পাবেন।’ তার মতে, যেসব ক্রেতা এবং সোনা ব্যবসায়ী বেশি পরিমাণ সোনা কিনে রেখেছেন তারা লাভবান হচ্ছেন। করোনার এই পেক্ষাপটে সোনার দাম আরও বাড়তে পারে বলে মনে করেন তিনি। তবে তিনি জানান, সোনার দাম বাড়লেও বাংলাদেশে সোনার চাহিদা বাড়েনি।
প্রসঙ্গত, করোনার প্রাদুর্ভাবের ম‌ধ্যে প্রতি ভরি সোনা চার হাজার ৪৩২ টাকা বাড়িয়ে নতুন দর নির্ধারণ করেছে বাজুস। বুধবার (৫ আগস্ট) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় বাজুস। করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট, চীন-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে ইউএস ডলারের দরপতন হচ্ছে। এর ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রমাগতভাবে সোনার মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় দেশীয় বুলিয়ন মার্কেটেও সোনার মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এনে বাজুস ৬ আগস্ট থেকে দেশের বাজারে সোনা ও রৌপ্যের নতুন মূল্য নির্ধারণ করেছে।

বৃহস্পতিবার (৬ আগস্ট) থেকে ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) সোনার দাম চার হাজার ৪৩২ টাকা বা‌ড়ি‌য়ে নির্ধারণ করা হ‌য়ে‌ছে ৭৭ হাজার ২১৬ টাকা। ২১ ক্যারেটের সোনা ৭৪ হাজার ৬৬ টাকা, ১৮ ক্যারেটের ৬৫ হাজার ৩১৮ টাকায় ও সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনা বিক্রি ৫৪ হাজার ৯৯৬ টাকা নির্ধারণ করা হ‌য়ে‌ছে।

বাজুসের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ৬ আগস্ট প্রতি ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) ২২ ক্যারেট সোনার দাম ছিল ৫৪ হাজার ৫২৯ টাকা। ওই সময় প্রতি ভরি ২১ ক্যারেট সোনার দাম ছিল ৫২ হাজার ১৯৬ টাকা এবং ১৮ ক্যারেট সোনার দাম ছিল ৪৭ হাজার ১৮০ টাকা। তখন প্রতি ভরি সনাতন পদ্ধতির সোনার দাম ছিল ২৭ হাজার ৫৮৫ টাকা। ওই সময় প্রতি ভরি ২১ ক্যারেট রুপার (ক্যাডমিয়াম) দাম ছিল এক হাজার ৫০ টাকা।

সোনা ব্যবসায়ীরা বলছেন, সোনার দাম বাড়ার কারণে পুরনো গহনার বেচাকেনা বর্তমানে বেশ রমরমা। তবে করোনায় সোনার বার বেচাকেনা আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে।

জানা গেছে, দেশে বছরে প্রায় ২০ হাজার থেকে ৪০ হাজার কেজি সোনার চাহিদা রয়েছে। তার মধ্যে ১০ শতাংশ পুরনো সোনার অলঙ্কার গলিয়ে সংগ্রহ করা হয়।

মূলত, পুরনো সোনার গহনা ও সোনার বার কেনাবেচার বড় ব্যবসা রাজধানীর তাঁতিবাজারে। এই বাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত মাসে কয়েকটি আন্তর্জাতিক পথে বিমান চলাচল শুরু হলেও দীর্ঘদিন বিমান চলাচল বন্ধ ছিল। এতে ব্যাগেজ রুলসের মাধ্যমে আমদানি হওয়া সোনার বার আসছে না বললেই চলে।

অনেকেই বলছেন, করোনাভাইরাসের কারণে গত মার্চ থেকে সামাজিক অনুষ্ঠান প্রায় বন্ধ। তার ওপর সোনার দাম বাড়তে বাড়তে অনেকেরই নাগালের বাইরে চলে গেছে। ফলে নতুন করে সোনার গহনা বানাতে দোকানমুখী হচ্ছেন না ক্রেতারা।

বাজুসের তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম অস্থির হয়ে ওঠে। এতে ১৯ ফেব্রুয়ারি দেশে প্রতি ভরি ২২ ক্যারেট সোনার দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৬১ হাজার ৫২৮ টাকা। এটি ছিল ওই সময় দেশের বাজারে সোনার সর্বোচ্চ দাম। আর আজ বৃহস্পতিবার (৬ আগস্ট) সেই একই মানের সোনা বিক্রি হচ্ছে ৭৭ হাজার ২১৬ টাকা। এর আগে দেশে সোনার দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছিল ২০১২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর। সে সময় প্রতি ভরি ২২ ক্যারেট সোনার দাম দাঁড়িয়েছিল ৬০ হাজার ৬৫৩ টাকা।

জানা গেছে, বৈশ্বিক এ মহামারির মধ্যে চারবার সোনার দাম বাড়ালো বাজুস। এর আগে ২৩ জুলাই সোনার দাম নির্ধা‌রণ ক‌রে‌ছিল বাজুস, যা ২৪ জুলাই থে‌কে কার্যকর হয়। তার আগে গত ২৩ জুন এবং তারও আ‌গে ২৮ মে সোনার দাম নির্ধা‌রণ করে‌ছিল স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের এ সংগঠনটি। যদিও মরণঘাতী করোনার শুরুর দিকে (১৮ মার্চ) সোনার দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় বাজুস। পরদিন ১৯ মার্চ থেকে সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) সোনার দাম নির্ধারণ করা হয় ৬০ হাজার ৩৬১ টাকা।

এদিকে দেশীয় স্বর্ণশিল্পের বিকাশ ও রফতানি বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে স্বর্ণ নীতিমালা ২০১৮-এর বিধান অনুসরণ করে অনুমোদিত গোল্ড ডিলার হিসেবে গত ৩০ জুন দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো স্বর্ণবার আমদানি করে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড। প্রতিষ্ঠানটি ১১ কেজির চালান নিয়ে এসেছে।

সর্বশেষ আপডেট: ৭ আগস্ট ২০২০, ২৩:২০
Desk
এড্যমিন

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও