কভিড-১৯-এর প্রভাবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর পর্যটন খাতের সম্ভাব্য ক্ষতির একটি হিসাব করেছে বিশ্বব্যাংক। ‘কভিড-১৯ অ্যান্ড ট্যুরিজম ইন সাউথ এশিয়া: অপরচুনিটি’স ফর সাসটেইনেবল রিজিওনাল আউটকামস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানিয়েছে, করোনার কারণে পর্যটন খাতের স্থবিরতায় বাংলাদেশে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) সম্ভাব্য ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা (২০৩ কোটি ডলার)। এ খাতে চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার মানুষ।
দেশের পর্যটনের ভরা মৌসুম হিসেবে বিবেচনা করা হয় অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়কে। বেড়াতে পছন্দ করেন এমন মানুষ এ সময় বেরিয়ে পড়েন। কেউ দেশে আবার কেউ দেশের বাইরে ঘুরতে যান। বিদেশ থেকেও অনেকে বেড়াতে আসেন বাংলাদেশে। কিন্তু মরণঘাতী ভাইরাস করোনার আঘাতে এবার ভ্রমণ পরিকল্পনা বাদ দিয়েছে সবাই। ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর বন্ধ হয়ে যায় যোগাযোগ ব্যবস্থা। তালা পড়ে হোটেল-মোটেলে। শূন্য পড়ে থাকে ভ্রমণকেন্দ্রগুলো।
করোনার প্রভাবে বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত খাতের একটি হচ্ছে পর্যটন। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, করোনাকালে দক্ষিণ এশিয়ায় পর্যটনসংশ্লিষ্ট ৪ কোটি ৭৭ লাখ মানুষ কর্মহীন হয়েছে, যার একটি বড় অংশই নারী। আর দেশগুলোর জিডিপিতে ক্ষতি হয়েছে ৫ হাজার কোটি ডলার। পর্যটনে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে মালদ্বীপের। কেননা ২০১৯ সালে দেশটির জিডিপিতে পর্যটন খাতের অবদান ছিল ৫৬ দশমিক ৬ শতাংশ এবং কর্মসংস্থানে অবদান ছিল ৫৯ দশমিক ৬ শতাংশ। মালদ্বীপের মতো পর্যটননির্ভর না হলেও করোনায় উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়েছে শ্রীলংকা, ভুটান, ভারত, নেপাল ও পাকিস্তানের।
ট্যুরিজম বোর্ডের হিসাবে করোনার প্রভাবে এখন পর্যন্ত ১৩ হাজার কোটি টাকার মতো ক্ষতির তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মহিবুল হক। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, পর্যটনে যে ক্ষতি হচ্ছে বা হয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। যাতে আর না হয় সেজন্য আমরা ওপেন করার ব্যবস্থা করছি। হোটেল-মোটেল রিসোর্টগুলো যাতে এ করোনার ভেতরেও খুলে দেয়া যায়, সেই জন্য একটি নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে।
ট্যুর অপারেটরদের সংগঠন টোয়াবের পরিচালক মোহাম্মদ এ রউফ বলেন, হোটেল-মোটেল-পর্যটন স্পট সব বন্ধ। কবে নাগাদ এসব চালু হবে এ বিষয়ে কোনো দিকনির্দেশনা আমাদের দেয়া হয়নি। আমাদের সংগঠনে সাত শতাধিক সদস্য রয়েছে। সবার ব্যবসার অবস্থা খারাপ। সরকারের সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এ খাতের ঘুরে দাঁড়ানো প্রায় অসম্ভব।
পর্যটন খাতসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ২০১৯ সালে দেশের স্থানীয় পর্যটকের সংখ্যা ছিল প্রায় ১ কোটি ২০ লাখের মতো। আর বিদেশী পর্যটক এসেছিলেন ৭ থেকে ৮ লাখের মতো। জিডিপিতে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ অবদান ছিল পর্যটন খাতের। কর্মসংস্থান তৈরির ক্ষেত্রেও এ খাতের অবদান ছিল ২ শতাংশ হারে। সরকার ট্যুরিজম খাত নিয়ে ৫০ হাজার কোটি টাকার মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভুঁইয়া বলেন, পর্যটন খাতে বড় অংকের বিনিয়োগ করেছেন ব্যবসায়ীরা। এ খাত কর্মসংস্থানের প্রচুর সুযোগও তৈরি করেছে। এখন পর্যটনের ভরা মৌসুমে সবাই বসে রয়েছেন। এ খাতকে পুনরুজ্জীবিত করতে হলে সরকারের বড় ধরনের নীতিসহায়তা দরকার।
সর্বশেষ আপডেট: ১৩ আগস্ট ২০২০, ১০:০৭
পাঠকের মন্তব্য