ভোগান্তির শেষ কোথায় পাসপোর্ট নিয়ে

পাসপোর্ট , ভুক্তভোগী, জরুরি পাসপোর্ট
পাসপোর্ট , ভুক্তভোগী, জরুরি পাসপোর্ট

পাসপোর্ট নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই, তবুও আসছেনা দীর্ঘদিন থেকে চলে আসা সমস্যার কোন সমাধান। সম্প্রতি কোভিড-১৯ মহামারীর জন্য সেই সংকট বেড়েছে বহুগুন। করোনাকালে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরে বেশ বড় ধরনের জট সৃষ্টি হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে করোনা পরিস্থিতি কমে গেলে আবেদনের পরিমাণ যখন বাড়বে তখন এই জটলা আরো বড় সমস্যার সৃষ্টি করবে।
পাসপোর্ট নিয়ে ভোগান্তির যেন শেষ নেই!

এমনিতেই পাসপোর্ট নিয়ে ভোগান্তির শেষ নেই গ্রাহকদের। তার উপর কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে তৈরি হয়েছে নতুন সমস্যা। লকডাউনের জন্য পাসপোর্ট অফিস বন্ধ থাকায় বন্ধ ছিলো কাজ, এতে ঝুলে থাকে প্রায় সাড়ে তিন লাখ আবেদন।

জানা যায়, এমনিতেই পাসপোর্ট অফিসের কাজের ধীরতার জন্য অনেক আবেদন ঝুলে ছিলো এতদিন। তার উপর বিশ্বজুড়ে প্রাণঘাতী কোভিড ভাইরাসের কারণে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরে বড় ধরনের জট সৃষ্টি হয়েছে।

কোভিড-১৯ পরিস্থিতির জন্য গত ২৬ শে মার্চ সরকারি অফিস ছুটি ঘোষণার পর থেকে পাসপোর্ট অফিসও বন্ধ হয়ে যায়। এতে গত ৪ মাসে পাসপোর্ট অফিসে পুরতন ও নতুন মিলিয়ে অন্তত সাড়ে ৩ লাখ পাসপোর্ট আবেদন ঝুলে আছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঝুলে থাকা পাসপোর্টগুলোর অধিকাংশই আটকে আছে ফিঙ্গার প্রিন্টের জটিলতার কারণে।

এ ছাড়াও বিগত ৪ মাসে দেশের বাইরে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস থেকে বিশেষ বিমানে করে ৫ লাখ পাসপোর্ট আবেদন দেশে এসেছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে আবেদনকারীদের পাসপোর্ট দিতে পারছেন না পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষ।

আশঙ্কা করা হচ্ছে, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পাসপোর্ট ডেলিভারি দেয়া নিয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে আরো বড় ধরনের জটিলতা দেখা দিবে। কেননা ওই সময় নতুন আবেদন পড়ার পাশাপাশি পুরনো যাদের আবেদন ঝুলে আছে তাদেরও পাসপোর্ট ডেলিভারি দিতে হবে।

তাছাড়াও পাশাপাশি পাসপোর্টের জন্য অনলাইনেও আবেদন বেশি পড়বে। এসব নিয়ে নিয়ে খোদ পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষই রয়েছে চাপের মধ্যে।

এদিকে এনিয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা এই জট কমাতে নানামুখী উদ্যোগ নিচ্ছেন। পাশাপাশি একাধিক প্রিন্ট মেশিন কেনাও প্রক্রিয়াধীন আছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতির কারণে পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অধিদপ্তরের সেবাকার্য বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বড় ধরনের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

পাসপোর্ট জটিলতার বিষয়ে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানান, প্রাণঘাতী করোনায় পাসপোর্ট অধিদপ্তরে কাজের গতি কমেছে। নতুন আবেদন নেয়া হচ্ছে না। নতুন আবেদনে ফিঙ্গার প্রিন্ট নিতে হয় এজন্য সেটি বন্ধ আছে। কারণ সেখান থেকে করোনা ছড়ানোর শঙ্কা আছে। এজন্য ই-পাসপোর্ট বন্ধ আছে। তিনি জানান, শুধুমাত্র রি-ইস্যুর আবেদন নেয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দ্রুত আগের মতো আমরা ডেলিভারি দিতে পারবো।

ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর সূত্রে আরো জানা গেছে, গত ২৬শে মার্চ সরকারি ছুটির কারণে বন্ধ হয়ে যায় পাসপোর্ট অফিস। বন্ধ হয়ে যায় ই-পাসপোর্টের অনলাইন আবেদনও। পুরনো ডেলিভারিগুলোও দেয়া হয়নি। এতে জট পড়েছে পাসপোর্ট অফিসে। এখন শুধু ডেলিভারি দেয়া হচ্ছে রি-ইস্যু করা পাসপোর্টগুলো। এ ছাড়াও যেসব মুমূর্ষু রোগী বিদেশে চিকিৎসা নিতে চান তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে জরুরি পাসপোর্ট দেয়া হচ্ছে।

শুধুমাত্র দেশেই পাসপোর্ট আবেদনের জটলা রয়েছে তেমন নয়। দেশের বাইরেও অনেক প্রবাসী এই পাসপোর্ট জটিলতার শিকার হয়েছেন। অনেক প্রবাসীই পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেছেন কিন্তু পাননি। কবে নাগাদ পাবেন সেটাও বুঝতে পারছেন না। পাসপোর্ট জটিলতা নিয়ে অনেকে ভোগান্তিও পোহাচ্ছেন বলে জানা যায়।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ভুক্তভোগী জানিয়েছেন, “পাসপোর্ট অফিসের এই জটলা নতুন না। দীর্ঘদিন থেকেই তাদের কাজের ধীরগতির জন্য জটলা লেগেই থাকে। আমি কোভিড-১৯ আসার ৪ মাস আগে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেছি কিন্তু এখনো পাসপোর্ট পাইনি। এখন করোনার জন্য যে জটলা তৈরি হলো, এতে কবে নাগাদ আমি পাসপোর্ট পাবো তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছি “।

এক সমীক্ষা থেকে জানা যায়, করোনা পরিস্থিতির আগে প্রতিদিন গড়ে ১৪ হাজার আবেদনকারী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন পাসপোর্ট অফিসে আবেদন করতেন। আবেদনকারীদের সরকার নির্ধারিত ফি হিসাব করলে তাদের কাছ থেকে অধিদপ্তর প্রতিদিন প্রায় ৫ কোটি টাকা আদায় করে থাকে।

যাতে মাসে ১৫০ কোটি টাকার বেশী। এখন রি-ইস্যু ও জরুরি পাসপোর্ট থেকে সরকার দিনে মাত্র ২০ লাখ টাকা রাজস্ব পাচ্ছে। এতে সরকার বড় ধরনের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে চলতি অর্থ বছরে এই খাত থেকে সরকার ১১ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারাবে।

সর্বশেষ আপডেট: ১৩ আগস্ট ২০২০, ২১:১৮
Desk
এড্যমিন

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও