করোনা ভাইরাসের প্রভাব কাটিয়ে উঠতে বৃহৎ শিল্প ও সেবা খাতের জন্য সরকার ঘোষিত ৩০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা তহবিল থেকে ১ হাজার কোটি টাকা ঋণ পেয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত উড়োজাহাজ সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। কিন্তু বিমান সে তহবিল থেকে এখন পযন্ত সব মিলিয়ে ৩শ কোটি টাকাও উত্তোলন করেনি। একই সঙ্গে আর কোন লোনের জন্যও আবেদন করেনি বিমান।
চলতি মূলধন হিসেবে সোনালী ব্যাংক থেকে গত মে মাসে এ ঋণ পায় বিমান, যা বোয়িং থেকে কেনা উড়োজাহাজের কিস্তি, উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণ, লিজে আনা উড়োজাহাজের ব্যয় ও ফ্লাইট পরিচালনার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।
বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোকাব্বির হোসেন এভিয়েশন নিউজকে বলেন, গত মে, জুন ও জুলাই এই তিন মাসে এই লোন থেকে বিমান এখনো ৩শ কোটি টাকাও উঠায়নি। সোনালী ব্যাংক থেকে সাড়ে ৪ শতাংশ সুদে বিমান এই টাকা লোন নিয়েছে।
মোকাব্বির হোসেন বলেন, এমনিতে বিমানের ঘাড়ে অনেক বোঝা, তাই লোনের পরিমান বেশি বাড়িয়ে এই বোঝা আরো বাড়াতে চাচ্ছেন না তিনি। তাই পুরো টাকা এখনো নেয়া হয়নি। তার মতে লোন নিলে সুদ সহ সে টাকা পরিশোধ করতে হবে। বিমানের আয় এখন কম। তিনি বলেণ, মিডিয়াসহ বিভিন্ন জায়গায় ভুল তথ্য আসছে, বলা হচ্ছে সোনালী ব্যাংক থেকে নেয়া ১০০০ কোটি টাকা শেষ। আবারো ১০০০ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। এসব তথ্য সঠিক না। বাস্তব তথ্য হচ্ছে, সব মিলিয়ে গত মে জুন ও জুলাই এই তিন মাসে বিমান ওই খাত থেকে ৩শ কোটি টাকাও উত্তোলন করেনি। এছাড়া আর কোন লোনের জন্যও বিমান আবেদন করেনি।
বিমান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে বহরে থাকা ১৮টি উড়োজাহাজের রক্ষণাবেক্ষণেই প্রতি মাসে খরচ হচ্ছে ২৬৬ কোটি টাকা। তাছাড়া লিজে আনা ছয়টি উড়োজাহাজের জন্য প্রতি মাসে ৯৮ কোটি টাকা, বোয়িং থেকে কেনা উড়োজাহাজের কিস্তি ৭০ কোটি টাকা। অর্থাৎ উড়োজাহাজ লিজ রেন্ট, মেইনটেন্যান্স ও ব্যাংকঋণের কিস্তি আসে মাসে ৪৩৪ কোটি টাকা। এর বাইরে রয়েছে ফ্লাইট পরিচালনার ব্যয়।
বর্তমানে সংস্থার বহরে উড়োজাহাজ রয়েছে মোট ১৮টি। এর মধ্যে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং থেকে সরাসরি কেনা হয়েছে ১২টি। এর মধ্যে ৪১৯ আসনের লম্বা দূরত্ব পাড়ি দিতে সক্ষম বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর উড়োজাহাজ রয়েছে চারটি। ২০১১-১৪ তিন বছরের মধ্যে উড়োজাহাজগুলো বিমানবহরে যুক্ত হয়। পরবর্তী সময়ে ধাপে ধাপে যুক্ত হয় ১৬২ আসনের দুটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ ও ২৭১ আসনের ছয়টি বোয়িং ৭৮৭ ‘ড্রিমলাইনার’ উড়োজাহাজ।
বাকি ছয়টি উড়োজাহাজের মধ্যে চারটি ৭৩৭-৮০০ ও ৭৪ আসনের দুটি ড্যাশ-৮ লিজে আনা হয়েছে। বর্তমানে এসব উড়োজাহাজের জন্য কেবল রক্ষণাবেক্ষণেই বিমানকে প্রতি মাসে গুনতে হচ্ছে ২৬৬ কোটি টাকা। শুধু উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণ নয়, এর বাইরেও প্রতি মাসে লিজে আনা ছয়টি উড়োজাহাজের জন্য ৯৮ কোটি টাকা, বোয়িং থেকে কেনা উড়োজাহাজের কিস্তি বাবদ ৭০ কোটি এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ও দেশ-বিদেশের অফিস রক্ষণাবেক্ষণে আরো অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে সংস্থাটিকে।
সর্বশেষ আপডেট: ১৫ আগস্ট ২০২০, ১৮:৫৯
পাঠকের মন্তব্য