একজন বাংলাদেশির ওয়ার্ক পারমিট বাতিল করার জের ধরে মালয়েশিয়ার সাথে বাংলাদেশ কোনো ধরনের বিরোধে যাবে না বা কূটনৈতিক সম্পর্ক নষ্ট করবে না বলে জানিয়েছেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ। তিনি মনে করেন, প্রবাসীরা যে দেশে অবস্থান করেন সে দেশের আইন মেনে চলা তাদের দায়িত্ব।
মালয়েশিয়ায় অভিবাসীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার নিয়ে আল জাজিরায় সাক্ষাৎকার দেয়ার জের ধরে সেখানকার সরকার সম্প্রতি বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিক রায়হান কবিরের ওয়ার্ক পারমিট বাতিল করে দেয়। এ প্রসঙ্গে জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে ঢাকার এমন অবস্থান জানান প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী।
ইমরান আহমদ বলেন, ‘মালয়েশিয়ায় টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দেয়ায় একজন বাংলাদেশির ওয়ার্ক পারমিট বাতিল করার খবরটি আমরা শুনেছি। কিন্তু সকল প্রবাসীর উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আপনারা যেদেশে কাজ করছেন সেদেশের আইন-কানুন মেনে চলুন।‘
‘মনে রাখতে হবে, আপনি কিন্তু নিজের দেশে নেই। অন্য আরেকটি দেশে আছেন। আর যেহেতু আপনি অভিবাসী কর্মী ওই দেশ তো আপনার ওপর কড়া নজর রাখবেই। সেদেশের মানহানি বা সম্মানের ক্ষতি হলে সংশ্লিষ্ট দেশ রিঅ্যাকশন তো করবেই।’
এক প্রশ্নের জবাবে প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী বলেন, ‘একজনের বক্তব্য বা একজনের ওয়ার্ক পারমিট বাতিল হলে আমরা সেজন্য কূটনৈতিক সম্পর্ক নষ্ট করব বা সংঘর্ষে, যাব এটা রং। সবকিছুর একটা প্রক্রিয়া আছে।’
তিনি বলেন, ‘বহু ঘটনা সত্য হলেও সবাই তা বলতে পারে না।’
তবে বিষয়টি নিয়ে যদি কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনার মতো পরিস্থিতি হয় তখন আলোচনা হবে বলে জানান ইমরান আহমদ।
মালয়েশিয়ায় লকডাউন চলাকালে অভিবাসীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার নিয়ে আল জাজিরার ‘১০১ ইস্ট প্রোগ্রাম’ এর একটি পর্বে সম্প্রতি সাক্ষাৎকার দেন বাংলাদেশি রায়হান কবির। গত ৩ জুন ‘লকড আপ ইন মালয়েশিয়া’স লকডাউন’ শিরোনামে পর্বটি প্রচারিত হয়। ওই পর্বে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে রেড জোনে অভিযান চালানোর সময় মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ ও সমালোচনা তুলে ধরা হয়।
তবে তথ্যচিত্রটি প্রচারের পর দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসমাইল সাবরি ইয়াকব আল জাজিরাকে ‘মিথ্যা খবর পরিবেশন’র জন্য ক্ষমা চাইতে বলেন। এমনকি চ্যানেলটির বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ার পুলিশ রাষ্ট্রদ্রোহ ও মানহানির অভিযোগও তদন্ত করেছে।
পর্বটি প্রচারিত হওয়ার পর ইমিগ্রেশন বিভাগের মহাপরিচালক খায়রুল যাইমি দাউদ বিদেশিদের সতর্ক করে বলেন, মালয়েশিয়ার বিষয়ে নেতিবাচক বক্তব্য দেয়ার কারণে তাদের পারমিট প্রত্যাহার করা হতে পারে।
একদিন পরই রায়হান কবিরের অবস্থান সম্পর্কে তথ্য কর্তৃপক্ষকে জানাতে আহ্বান জানায় মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগ। বাংলাদেশি এ অভিবাসীর খোঁজে তার ব্যক্তিগত বিবরণ তুলে ধরায় ইমিগ্রেশন বিভাগের ফেসবুক পেজে ব্যাপক সমালোচনা হয়। অনেকেই এটিকে ‘অভিবাসীবিরোধী মনোভাব’ হিসেবে সমালোচনা করেন।
পরে মালয়েশিয়ার পুলিশ মহাপরিদর্শক আবদুল হামিদ বদর ২৫ বছর বয়সী রায়হান কবিরের ওয়ার্ক পারমিট বাতিলের ঘোষণা দেন। এর ফলে এখন রায়হান কবিরকে আটকও করতে পারবে সেখানকার কর্তৃপক্ষ। নিজ দেশে ফেরত আসতে চাইলে আগে রায়হানকে আত্মসমর্পণ করতে হবে।
এ বিষয়ে বিশ্বের বৃহত্তম বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের মাইগ্রেশন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিষয়টি একজন রায়হান কবিরের নয়। হাজার হাজার বাংলাদেশি বছরের পর বছর ধরে যে সঙ্কটে ভুগছিলেন, তা তিনি তুলে ধরেছেন। তিনি দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।’
‘মালয়েশিয়া এখানে একজনকে নয়, সবার জন্য বার্তা দিয়েছে যে কথা বললেই ওয়ার্ক পারমিট বাতিল করা হবে।’
শরিফুল হাসান বলছিলেন, ‘রায়হান কবির নিজের স্বার্থে আল জাজিরার সাথে কথা বলেননি। তিনি কোনো অন্যায়ও করেননি। ব্যক্তির চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত কনটেন্টে। আসলে তিনি যা বলেছেন বা আল জাজিরার প্রতিবেদনে যা উঠে এসেছে তা সত্য কি-না সে দিকে মনোযোগ দিতে হবে।’
‘আমাদের উচিত—এ ধরনের ঘটনা বা নির্যাতন হয়ে থাকলে মালয়েশিয়াকে তা বন্ধ করতে বলা। মালয়েশিয়ায় আমাদের ১০ লাখের বেশি কর্মী থাকেন সত্য। তাই কূটনৈতিক শিষ্টাচার মেনেই তাদের বলতে হবে এসব ঘটনার তদন্ত করতে। কূটনৈতিক শিষ্টাচার বজায় রেখেও যে প্রতিবাদ করা যায় সেটা আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয়।’
শরিফুল হাসান বলেন, ‘মালয়েশিয়ার আইনজীবীরাই বলছেন, এভাবে গণমাধ্যমে কথা বলার জন্য ওয়ার্ক পারমিট বাতিল করা যেতে পারে না।’
সর্বশেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২০, ২০:০৪
পাঠকের মন্তব্য